ঢাকা , বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ , ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহারে সফলতা

দুবছরে ৫০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করে তাক লাগালেন ইলিয়াস

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১২-০৩-২০২৫ ০২:০১:২৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১২-০৩-২০২৫ ০৫:২৬:২১ অপরাহ্ন
দুবছরে ৫০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করে তাক লাগালেন ইলিয়াস ​ছবি: সংগৃহীত
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, নিরাপদ উপায়ে অধিক ফলন নিশ্চিত করতে নাটোরের নলডাঙ্গায় শুরু হয়েছে পলিনেট হাউস ব্যবস্থাপনা। বিষ ও রোগমুক্ত চারা দিয়ে চাষাবাদ করার জন্য রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই পলিনেট হাউস স্থাপন করা হয়। উপজেলার মিজাপুর দিয়ারপাড়া এলাকায় আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ নাটোর নলডাঙ্গা কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেছেন উদ্যোগী চাষি ইলিয়াস শেখ।

নার্সারি ঘুরে দেখা যায়, ইলিয়াছের নার্সারিতে পলিনেট হাউসে ও উন্মুক্ত পরিবেশে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। সবজিই সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে রয়েছে রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, বিটরুট, ওলকপি, বোম্বাই মরিচ, নাগা মরিচ, কুমড়া, পেঁপে ও ধুন্দুল। ফলের মধ্যে রয়েছে জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেয়ারা, আঙুর, ডালিম ও বিভিন্ন জাতের আম প্রভৃতি। এ ছাড়া ফুলের মধ্যে আছে গোলাপ, মাধবীলতা, কুঞ্জলতা ও গোল্ডেন শাওয়ার। ঔষধি গাছের মধ্যে হরীতকী, লজ্জাবতী, অশোক ও অ্যালোভেরা উল্লেখযোগ্য। স্থানীয় শ্রমিকরা বলছেন, এই পলিনেট হাউসে কাজ করে ভাগ্য বদলেছে তাদের। সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা।

ইলিয়াস শেখ বলেন, মা-বাবা, একমাত্র ছেলে আর একটি বড় বোন রয়েছে। আমি এসএসসির পর কলেজে ভর্তি হই। বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু পরিবারে অভাব-অনটন জেঁকে বসায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই ঢাকায় পোশাক কারখানায় যোগ দেন। কিন্তু মানিয়ে নিতে না পেরে মির্জাপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। বাবার দেওয়া কিছু পুঁজি নিয়ে মুদি দোকান দেন। পাশাপাশি ছোট পরিসরে বিভিন্ন ফলের নার্সারি শুরু করেন।

পরে নলডাঙ্গা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সুযোগ হয়ে ওঠে পলিনেট হাউসের মাধ্যমে উন্নত জাতের সবজি চারা উৎপাদনে ভালো সাড়া পান। এখন তার পলিনেটে ১০ জন লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। পরিবার নিয়ে ভালো দিন কাটছে। পলিনেট হাউস থেকে উৎপাদিত চারা নিয়ে উপজেলা কৃষি মেলায় টানা তিনবার (২০২৩-২৪) পুরস্কার পান।

ইলিয়াছ শেখ আরও বলেন, চারা উৎপাদনে বৈরী আবহাওয়া সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পলিনেট হাউসে সারা বছরই চারা উৎপাদন সম্ভব। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এখানে উৎপাদিত ফসল বাজারজাত ও বিদেশে রপ্তানি করতে সরকারের সহযোগিতা চান ইলিয়াস শেখ।

নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কিশোয়ার হোসেন বলেন, এই পলিনেট হাউস ব্যবস্থা স্থাপনে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা, যা সরকারি প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে বিদেশি টেকনিশিয়ান দ্বারা বানানো। ইলিয়াস এটি পেয়েছেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। ইলিয়াস শেখ ঢাকায় থাকতেন; কিন্তু তার কৃষি বিষয়ে আগ্রহ দেখে আমরা তাকে পলিনেটের ব্যবস্থা করি।

আজ সে আমাদের পরামর্শে ও নিজের প্রচেষ্টায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করে সফলতা অর্জন করেছে ইলিয়াস শেখ। এখানকার চারা চাষ করে কৃষকরা স্বল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ